বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০১০

একটি ব্লগ কিংবা ফেইসবুক স্ট্যাটাসের গল্প

১.
সময় খুব দ্রুত বদলায়। আমার এখনও মনে আছে এইতো সেদিন আমি কম্পিউটার ল্যাবের পরীক্ষায় বসে বসে কেঁদেছি। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের উপর পরীক্ষা। কি প্রশ্ন এসেছিল তার সবগুলা মনে করতে না পারলেও কিছু কিছু মনে পড়ে। যেমনঃ বুলেট, নাম্বারিং সংযুক্ত করা; হাইপারলিঙ্ক করা ইত্যাদি। কিচ্ছু পারিনি আমি। পারবোই বা কিভাবে? আগে তো কখনও কম্পিউটারই ছুয়ে দেখিনি, কম্পুটা অন-অফ করতেও জানতাম না। স্যার যখন কি করেছি চেক করতে আসলো, বোকার মতো কাঁদতে আরম্ভ করলাম। আমার কান্না দেখে স্যারও ভড়কে গেলেন। স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার এগুলো শেখা যায় এরকম ভাল কোন বইয়ের নাম বলেন প্লিজ, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো শিখতে। স্যার বললেন এগুলো আসলে বই পড়ে শেখা যায়না, মাঝে মাঝে কম্পিউটার সেন্টারে এসে প্র্যাকটিস করো, তাহলেই হবে।

২.
আমি খুব ঝামেলায় না পড়লে আব্বু-আম্মুর কাছে কখনও কিছু চাইনা। এখন পর্যন্ত সম্ভবত ২ টা জিনিস চেয়েছি তাদের কাছ থেকে। ১. এটা গোপন থাক আপাতত, ২. একখান কম্পু। রাগে কম্পু নিয়ে অনেক বেশি গুঁতাগুঁতি করতে শুরু করলাম। অভ্র’র খবরটা প্রথম পেয়েছিলাম দূর্লভের কাছ থেকে। হঠাৎ কম্পিউটার সেন্টারে একদিন দেখি মোসলেহ বাংলা লেখা পড়ছে। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কম্পিউটারে বাংলা লেখা পড়া যায়! পরে জানলাম সেটা সামহোয়্যারইন ব্লগ। একাউন্ট খুললাম। প্রথমদিকে ব্লগের ধারাচারা বুঝতে অনেক সময় লাগলো। সাধারণত বইয়ের ডাউনলোড লিঙ্ক চেয়ে সাহায্য পোস্ট পোস্টাতাম তখন। দেখলাম বেশ কয়েকজন হেল্প করছে লিঙ্ক দিয়ে। ব্লগের প্রতি কেমন জানি একটা ভাল লাগার সৃষ্টি হলো তখন থেকেই।

অনেক কষ্ট করে ব্লগ লিখতাম তখন। ভার্চুয়্যাল কিবোর্ডে মাউস দিয়ে একটা একটা করে ক্লিক করে, অনেক সময় লাগতো। এমনও হয়েছে মাসে এক্সট্রা ৮০০-৯০০ টাকা বিল এসেছে ল্যাবে। বুঝলাম এটার চেয়ে ইন্টারনেট নিয়ে নেওয়াই ভাল আমার। কাকতালীয়ভাবে সেদিন থেকেই P-6 এর অফার আসলো, নিয়ে নিলাম। আসক্তের মতো ব্লগে থাকি তখন। ২-৪ দিনেই শেষ হয়ে যায় পি-সিক্স। প্রায় সব ভাল ভাল লেখকের লেখা পড়া শেষ। তামিম ইরফানের বান্দরবেলা আর নাফিস ইফতেখারের ক্ল্যাসিক পোস্টগুলোর সেইরকম ফ্যান তখন আমি। তৈয়ব ভাই, মেহেদী আকরাম ভাইয়েরা তখন ওয়ার্ডপ্রেসে লিখতেন। উনাদের দেখাদেখি আমিও একাউন্ট খুললাম ওয়ার্ডপ্রেসে। হাবিজাবি যা পাই তাই পোস্টাই এখানে। কপি-পেস্ট করতাম অনেক। পরে যখন বুঝলাম এটা ঠিক না, তখন কপি করা সব পোস্ট ড্রাফট করে দিলাম।
ধীরে ধীরে ম্যাচুরিটি আসলো। বুঝলাম এই দুনিয়াটাকে আমি আসলে যেরকম ভাবছি সেরকম না। পরিচয় হলো অনেকের সাথে। বুঝলাম এইভাবে ব্লগে ছুটাছুটি করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না। কিন্তু এতদিনের অভ্যাস কি আর ছাড়া যায়! বুঝলাম এটাকে ছাড়তে কষ্ট হবে। তাই ব্লগটাকে ডায়েরীর মতো ভাবতে লাগলাম। আগে যেগুলো দায়েরীতে লিখতাম, এখন সেগুলো ব্লগে লিখি। কিন্তু ততদিনে আমার ব্লগ আর ব্লগ নাই, ব্লগের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমার একটা পোস্টেই আমার চারপাশের মানুষগুলো আমার খবর পেয়ে যায়। যে আমি কলেজ লাইফে এত মোবাইল এডিক্টেড ছিলাম, সেই আমি আজ মোবাইল ছুয়েও দেখিনা। ১০-১২ দিন পর মিসডকলগুলো দেখে ব্যাক করতে থাকি। হয়তো এরকম ব্লগের প্রতিও আকর্ষন থাকবেনা কিছুদিন পর, আকর্ষন অবশ্য অলরেডী কমতে আরম্ভ করেছে। সম্ভবত আর বেশিদিন ব্লগে সেভাবে থাকা হবেনা, দেখা যাক কি হয়।
ওহ হো ফেইসবুকের কথা তো কিছু লেখাই হলোনা! থাক আরেকদিন লেখবো, সেটা নিয়ে আরেকটা পোস্ট লিখা যাবে। এখন লিখতে আর ভাল লাগেনা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন